তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(ICT:Information and Communication Technology)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পদার্থ বিজ্ঞান - আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিকস(Modern Physics and Electronics) | NCTB BOOK

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এখন খুবই পরিচিত একটি বিষয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই করে ফেলতে পারি। ঊনবিংশ শতকে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের বিকাশ মানুষের যোগাযোগের ক্ষমতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে যোগাযোগের বিপ্লব এনেছে রেডিও, টেলিভিশন, সেলফোন বা ফ্যাক্স। সাম্প্রতিক কালে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট। 

Content added By

কোনো সভা বা অনুষ্ঠানে বক্তারা যে ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তাকে মাইক্রোফোন বলে। মাইক্রোফোন বক্তার কণ্ঠস্বরকে বিদ্যুৎ সংকেত বা তড়িৎ সংকেতে রূপান্তর করে। সেই বিদ্যুৎ সংকেতকে অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং স্পিকারে পাঠানো হয়। স্পিকার সেটাকে শব্দে রূপান্তর করে এবং শ্রোতারা লাউড স্পিকারে জোরে শুনতে পান। তোমরা যখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করো তখন বাইরে থেকে দেখা না গেলেও তোমরা আসলে মোবাইল ফোনের মাইক্রোফোনে কথা বলো এবং সেটির স্পিকারে শুনতে পাও। 

মাইক্রোফোনের কার্যক্রম 

দৈনন্দিন কিংবা বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য নানা ধরনের মাইক্রোফোন রয়েছে, ছবিতে সেরকম সাধারণ একটি মাইক্রোফোনের গঠন দেখানো হলো। এই মাইক্রোফোনের সামনে ধাতুর একটি পাতলা পাত বা ডায়াফ্রাম থাকে। ডায়াফ্রামের সাথে একটা চলকুণ্ডলী (Coil) লাগানো থাকে যেটি একটা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ভেতর নড়াচড়া করতে পারে। যখন কেউ এই মাইক্রোফোনের সামনে কথা বলে তখন ডায়াফ্রামটি শব্দ তরঙ্গের কম্পনের সাথে কাঁপতে থাকে। ডায়াফ্রামের সাথে লাগানো চলকুণ্ডলীটিও চৌম্বক ক্ষেত্রে সামনে-পেছনে নড়তে থাকে। চৌম্বক ক্ষেত্রে একটি চলকুণ্ডলী নাড়াচাড়া করলে সেখানে একটি বিদ্যুৎ শক্তির আবেশ হয়, কাজেই মাইক্রোফোনটি শব্দশক্তিটিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে একটি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠায়। শব্দের এই বৈদ্যুতিক সিগন্যাল শব্দের নিখুঁত উপস্থাপন হলেও এর মান খুবই কম থাকে, তাই তাকে ব্যবহার করার জন্য অ্যামপ্লিফায়ারে বাড়িয়ে নিতে হয়। তারপর সেটি শুধু স্পিকারে নয়, টেলিফোন লাইনে, রেডিও সম্প্রচারে বা রেকর্ডিংয়ে ব্যবহার করা যায়। 

Content added || updated By

স্পিকার মাইক্রোফোনের ঠিক বিপরীত কাজটি করে অর্থাৎ বিদ্যুৎ শক্তিটিকে শব্দে রূপান্তর করে।মাইক্রোফোনের ডায়াফ্রামের বদলে স্পিকারে চলকুণ্ডলী বা Collটি কাগজ বা হালকা ধাতুর তৈরি একটি কোন (Cone) বা শঙ্কুর সাথে লাগানো থাকে। যখন শব্দ থেকে তৈরি বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে বিবর্ধিত করে স্পিকারে পাঠানো হয় তখন কাগজ বা হালকা ধাতুর তৈরি শঙ্কু বা কোনটি সামনে-পেছনে কম্পিত হয়ে যথা শব্দ তৈরি করে। 

Content added || updated By

রেডিও বিনোদন ও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম । রেডিওতে আমরা খবরের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য গান-বাজনা এমনকি পণ্যের বিজ্ঞাপনও শুনতে পারি। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী তথ্য আদান- প্রদানের জন্য নিজব রেডিও ব্যবহার করে। মোবাইল বা সেলুলার টেলিফোন যোগাযোগেও রেডিও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। 

কোনো রেডিও সম্প্রচার স্টেশনের স্টুডিওতে যখন কেউ মাইক্রোফোনে কথা বলে তখন সেই শব্দ বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তরিত হয়। আমরা 20 Hz থেকে 20,000 Hz কম্পাঙ্ক পর্যন্ত শুনতে পারি। কাজেই শব্দ থেকে বিদ্যুৎ তরলে রূপান্তরিত সিগন্যালটিও এই কম্পাঙ্কের হয়। এটিকে পাঠানোর জন্য উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গের সাথে যুক্ত করা হয়। এই উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গকে বাহক তরঙ্গ বলে। বাহক তরঙ্গের সাথে সিগন্যালকে যুক্ত করার এই প্রক্রিয়াটিকে মডুলেশন বলা হয়। এই মডুলেটেড তরঙ্গ অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে বিবর্ধন করা হয় এবং অ্যান্টেনার সাহায্যে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ ভূমি তরঙ্গ হিসেবে কিংবা বায়ুমণ্ডলের আয়োনোস্ফিয়ারে প্রতিফলিত হয়ে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। রেডিও বা গ্রাহক যন্ত্রের ভেতর যে অ্যান্টেনা থাকে সেটি এই রেডিও তরঙ্গকে বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তর করে নেয়। এরপর প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করে বাহক তরঙ্গ থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ডিমডুলেশন বলা হয়। ডিমডুলেটেড বৈদ্যুতিক সিগন্যালটিকে অ্যামপ্লিফায়ার দিয়ে বিবর্ধন করে শোনার জন্য স্পিকারে পাঠানো হয়। 

রেডিও তরঙ্গ হিসেবে পাঠানোর জন্য রেডিও সম্প্রচার স্টেশনগুলো আলাদা আলাদা কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে। গ্রাহক যন্ত্রও নির্দিষ্ট কোনো স্টেশন শুনতে হলে সেই কম্পাঙ্কের সিগন্যালে টিউন করে নেয় তাই আলাদা আলাদা রেডিও স্টেশন সবাই নিজের অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে এবং শ্রোতারা নিজের পছন্দের রেডিও স্টেশনের অনুষ্ঠান শুনতে পারে । 

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে গ্রাহক তরঙ্গের বিচার বা Amplitude বাড়িয়ে বা কমিয়ে সিগন্যালটি সংযুক্ত করা হয় বলে এই পদ্ধতিটির নাম AM (Amplitude Modulation) রেডিও । যদি Amplitude সমান রেখে কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করে মডুলেট করা হতো তাহলে এই পদ্ধতিকে বলা হতো FM (Frequency Modulation) রেডিও। 

Content added || updated By

তোমরা সবাই টেলিভিশন দেখেছ এবং জানো যে টেলিভিশন এমন একটি যন্ত্র যেখানে দূরবর্তী কোনো টেলিভিশন সম্প্রচার স্টেশন থেকে শব্দের সাথে সাথে ভিডিও বা চলমান ছবিও দেখতে পাই। 1926 সালে জন লগি বেয়ার্ড প্রথম টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও বা চলমান ছবি পাঠিয়েছিলেন। তাঁর পদ্ধতিটি ছিল একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি, পরে ইলেকট্রনিকস ব্যবহার করে ছবি পাঠানোর পদ্ধতিটি আরো আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। রেডিও ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার কীভাবে কাজ করে সেটি যদি তোমরা বুঝে থাকো তাহলে টেলিভিশন কীভাবে কাজ করে সেটিও খুব সহজেই বুঝতে পারবে। টেলিভিশনে শব্দ এবং ছবি আলাদা সিগন্যাল হিসেবে পাঠানো হয়। শব্দ পাঠানোর এবং গ্রাহক যন্ত্রে সেটি গ্রহণ করে শোনার বিষয়টি ইতিমধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে আমরা ছবি পাঠানোর বিষয়টি ব্যাখ্যা করি। 

চলমান ছবি বা ভিডিও পাঠাতে হলে প্রতি সেকেন্ডে 25টি স্থির চিত্র পাঠাতে হয় এবং আমাদের চোখে তখন সেগুলোকে আলাদা আলাদা স্থির চিত্র মনে না হয়ে একটি চলমান ছবি বলে মনে হয়। 

টেলিভিশনে রঙিন ছবি পাঠানোর জন্য টেলিভিশন ক্যামেরা প্রতিটি ছবিকে লাল, সবুজ ও নীम (RGB Red, Green and Blue) এই তিনটি মৌলিক রঙে ভাগ করে তিনটি আলাদা ছবি তুলে নেয়। টেলিভিশন ক্যামেরার ভেতরে আলোকে সিসিডি (CCD Charge Coupled Device) ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করা হয়। এই বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে উচ্চ কম্পাঙ্কের বাহক তরঙ্গের সাথে যুক্ত করে অ্যান্টেনার ভেতর দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয় । 

গ্রাহক যন্ত্র বা টেলিভিশন সেট তার অ্যান্টেনা দিয়ে উচ্চ কম্পনের বাহক তরঙ্গকে গ্রহণ করে এবং রেকটিফায়ার দিয়ে বাহক তরঙ্গকে সরিয়ে মূল ছবির সিগন্যালকে বের করে নেয়। আগে এই সিগন্যাল থেকে তিন রঙের তিনটি ছবিকে ক্যাথোড রে টিউব নামের পিকচার টিউবে তার স্ক্রিনে ইলেকট্রন পান দিয়ে প্রক্ষেপণ করা হতো। এখন পিকচার টিউব প্রায় উঠে গিয়েছে এবং এলইডি (Light Emitting Diode) টেলিভিশন তার জায়গা দখল করেছে। এখানে ইলেকট্রন গান দিয়ে স্ক্রিনে ছবি তৈরি না করে লাল, সবুজ ও নীল রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলইডিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ করে ছবি তৈরি করা হয়। এলইডি টেলিভিশনে ছবির ঔজ্জ্বল্য অনেক বেশি এবং গুণগত মানও অনেক ভালো। এখানে উল্লেখ্য যে অ্যান্টেনার সাহায্যে টেলিভিশনের সিগন্যাল পাঠানো ছাড়াও কো এক্সিয়াল ক্যাবল দিয়েও সিগন্যাল পাঠানো হয়। এই ধরনের টিভির সম্প্রচার ক্যাবল টিভি নামে পরিচিত। এছাড়া স্যাটেলাইট টিভি নামে এক ধরনের টিভি অনুষ্ঠানের সম্প্রচার করা হয়। এটি মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি পৃথিবীতে পাঠানো হয়। 

Content added || updated By

টেলিফোন ও ফ্যাক্স

টেলিফোন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি যোগাযোগ মাধ্যম। আমরা এখন এই টেলিফোন ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে একজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ল্যান্ডফোন 

1875 সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন, নানা ধরনের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেটি আধুনিক টেলিফোনে রূপ নিয়েছে, কিন্তু তার মূল কাজ করার প্রক্রিয়াটি এখনো আগের মতোই আছে। 

তোমরা সবাই টেলিফোন দেখেছ এবং ব্যবহার করেছ। টেলিফোনে পাঁচটি উপাংশ থাকে। (a) সুইচ: যেটি মূল টেলিফোন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অথবা বিচ্ছিন্ন করে (b) রিংগার: যেটি শব্দ করে জানিয়ে দেয় যে কেউ একজন যোগাযোগ করেছে (c) কি প্যাড: যেটি ব্যবহার করে একজন অন্য একজনকে ডায়াল করতে পারে (d) মাইক্রোফোন: যেটি আমাদের কণ্ঠস্বরকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন করে (e) স্পিকার: যেটি বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে শব্দে রূপান্তর করে শোনার ব্যবস্থা করে দেয়। 

প্রত্যেকটি টেলিফোনই তামার তার দিয়ে আঞ্চলিক অফিসের সাথে যুক্ত থাকে। আমরা যখন কথা বলার জন্য কোনো নম্বরে ডায়াল করি তখন আঞ্চলিক অফিসে সেই তথ্যটি পৌঁছে যায়। সেখানে একটি সুইচ বোর্ড থাকে, যেটি নির্দিষ্ট গ্রাহকের টেলিফোনের সাথে যুক্ত করে দেয়। যদি আমরা অনেক দূরে কিংবা ভিন্ন কোনো দেশে একজনের সাথে কথা বলতে চাই তাহলে সুইচবোর্ড সেভাবে আমাদের নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে দেয়। 

প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার আগে যখন পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুজন মানুষ টেলিফোনে কথা বলত তখন কথাবার্তা পাঠানোর জন্য তাদের টেলিফোনকে তামার তার দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হতো, সে কারণে পুরো প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক খরচসাপেক্ষ। আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার পুরোটা অনেক সহজ হয়ে গেছে, এখন একটি অপটিক্যাল ফাইবারে একই সাথে আক্ষরিক অর্থে লক্ষ লক্ষ মানুষের কথাবার্তা পাঠানো সম্ভব। তাই টেলিফোনে কথাবার্তা বলার বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। 

মোবাইল টেলিফোন 

ল্যান্ডফোন যেহেতু তামার তার দিয়ে যুক্ত, তাই এটাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হয় এবং টেলিফোন করার জন্য কিংবা টেলিফোন ধরার জন্য সেই জায়গাটিতে আসতে হয়। মোবাইল টেলিফোন আমাদের সেই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং এই টেলিফোনটি আমরা আমাদের সাথে রেখে যেকোনো জায়গায় যেতে পারি এবং যতক্ষণ আমরা নেটওয়ার্কের ভেতরে আছি, যেকোনো নম্বরে ফোন করতে পারি, কথা বলতে কিংবা এসএমএস বিনিময় করতে পারি। সে কারণে মোবাইল ফোন এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। 

তোমরা সবাই দেখেছ মোবাইল টেলিফোন কোনো তার দিয়ে যুক্ত নয়, যার অর্থ এটি ওয়ারল্যাস বা রেডিও তরঙ্গ দিয়ে যোগাযোগ করে থাকে। কাজেই প্রত্যেকটি মোবাইল টেলিফোন আসলে একই সাথে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার এবং একটি রেডিও রিসিভার। 

ল্যান্ড টেলিফোনে যে যে যান্ত্রিক উপাংশ থাকা প্রয়োজন মোবাইল টেলিফোনেও সেগুলো কোনো না কোনো ৰূপে থাকতে হয়, তার সাথে আরো কয়েকটি বাড়তি বিষয় যুক্ত হয়। সেগুলো হচ্ছে (a) ব্যাটারি: এই ব্যাটারি দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করা হয় (b) স্ক্রিন: এই স্ক্রিনটিতে মোবাইল ফোনের যোগাযোগের তথ্য দেখানো হয় (c) সিম কার্ড: (SIM: Subscriber Identity Module) যেখানে ব্যবহারকারীর তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হয় (d) রেডিও ট্রান্সমিটার ও রিসিভার: এগুলো দিয়ে মোবাইল ফোন তার নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ করে (e) ইলেকট্রনিক সার্কিট: এটি মোবাইল টেলিফোনের জটিল কার্যক্রমকে ঠিকভাবে সম্পাদন করতে সাহায্য করে। 

মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগ করার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য পুরো এলাকাকে অনেকগুলো সেলে (Cell) ভাগ করে নেয় (চিত্র 13.16)। এজন্য মোবাইল টেলিফোনকে অনেক সময় সেলফোনও বলা হয়। প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে এই সেলগুলোর ব্যাসার্ধ 1 থেকে 20 কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রত্যেকটা সেলে একটি করে বেস স্টেশন (BTS: Base Transceiver Station) থাকে। একটি এলাকার অনেকগুলো বেস স্টেশন একটা বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের (BSC: Base Station Controller) মাধ্যমের মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রের ( MSC: Mobile Service Switching) সাথে যোগাযোগ করে। মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রটি মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এখানে প্রেরক আর গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। 

কেউ (প্রেরক) যখন তার মোবাইল ফোনে অন্য কোনো নাম্বারে (গ্রাহকের) ডায়াল করে তখন প্রেরকের মোবাইল ফোনটি সে যে সেলে আছে তার বেস স্টেশনের (BTS) সাথে যুক্ত হয়। সেই বেস স্টেশন থেকে তার কলটি বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের (BSC) ভেতর দিয়ে মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রে (MSC) পৌঁছায়। মোবাইল সুইচিং কেন্দ্র তার কাছে রাখা তথ্যভাণ্ডার থেকে গ্রাহক সেই মুহূর্তে কোন সেলের ভেতর আছে সেটি খুঁজে বের করে। তারপর প্রেরকের কলটি গ্রাহকের সেই সেলের বেস স্টেশনের সাথে যুক্ত করে দেয় এবং সেই বেস স্টেশন থেকে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে রিং দেওয়া হয়। 

মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ককে সচল রাখার জন্য অনেক ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের মোবাইল টেলিফোন থেকে খুবই কম শক্তির সিগন্যাল ব্যবহার করে কাছাকাছি বেস স্টেশনের সাথে যুক্ত করা হয় এবং আমরা যদি একটি সেল থেকে অন্য সেলে চলে যাই এই নেটওয়ার্ক সেটি জানতে পারে এবং এক বেস স্টেশন থেকে অন্য বেস স্টেশনে যোগাযোগটি স্থানান্তর করে দেয়। একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে যদি অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী থাকে তাহলে ছোট ছোট অনেক সেল দিয়ে তাদের ফোন করার সুযোগ দেওয়া হয়। আবার গ্রামের কম জনবসতি এলাকায় একটি অনেক বড় সেল দিয়ে পুরো এলাকা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রাখা হয়। 

এখানে উল্লেখ্য যে, শুরুতে শুধু কথা বলার জন্য টেলিফোন উদ্ভাবন করা হয়েছিল। পরে মোবাইল টেলিফোনে কথার সাথে সাথে এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন স্মার্টফোন নামে নতুন যে ফোনগুলো এসেছে সেগুলো কণ্ঠস্বরের (Voice) সাথে সাথে সব ধরনের তথ্য (Data) আদান প্রদান করতে পারে। কাজেই সেগুলো সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে এবং আগে যে কাজগুলো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছাড়া করা সম্ভব ছিল না সেগুলো এই স্মার্টফোন দিয়ে করা সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই স্মার্টফোনগুলোর জন্য নানা ধরনের অ্যাপ (Application) তৈরি হচ্ছে সেগুলো দিয়ে স্মার্টফোন আমাদের আরো নানা ধরনের কাজ করতে সাহায্য করে। 

স্মার্টফোন একদিকে আমাদের জীবনযাত্রার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। একই সাথে খুব সহজে স্মার্টফোনে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার সুযোগের কারণে নতুন প্রজন্ম সামাজিক নেটওয়ার্ক জাতীয় বিষয়গুলোতে অনেক অপ্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করছে, সেটি এই মুহূর্তে শুধু আমাদের দেশের নয়, সারা পৃথিবীর একটি বড় সমস্যা।  

ফ্যাক্স 

ফ্যাক্স শব্দটি হচ্ছে ফ্যাক্সিমিন (Facsimile) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ফ্যাক্স করা বলতে আমরা বোঝাই কোনো ডকুমেন্টকে কপি করে টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া। বর্তমান যুগে কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট এই ফ্যাক্স প্রযুক্তিকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছে, তারপরও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এখনো এই প্রাচীন কিছু নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। শুনে অবাক লাগতে পারে, ফ্যাক্স পাঠানো হয় টেলিফোন লাইন দিয়ে কিন্তু প্রথম ফ্যাক্সের ধারণাটি পেটেন্ট করা হয় টেলিফোন আবিষ্কারেরও ত্রিশ বছর আগে। 

ফ্যাক্স মেশিন একই সাথে একটা ডকুমেন্টের কপি পাঠাতে পারে এবং এই মেশিনে পাঠানো একটি কপিকে প্রিন্ট করে দিতে পারে। ফ্যাক্স মেশিনে যখন একটি ডকুমেন্ট দেওয়া হয় তখন সেখানে উজ্জ্বল আলো ফেলা হয়, ডকুমেন্টের কালো অংশ থেকে কম এবং সাদা অংশ থেকে বেশি আলো প্রতিফলিত হয়, সেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে ডকুমেন্টটির কপিকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপাস্তর করে টেলিফোন লাইন দিয়ে পাঠানো হয় । 

টেলিফোন লাইনের অন্য প্রান্তে ফ্যাক্স মেশিনটি তার কাছে পাঠানো ডকুমেন্টের কপিটিকে একটি প্রিন্টারে প্রিন্ট করে দেয়। ফ্যাক্স মেশিন এখনো একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি, এটি একটি ডকুমেন্টের কপিকে শুধু সাদা এবং কালো হিসেবে পাঠানো হয় বলে লিখিত ডকুমেন্টের জন্য ঠিক থাকলেও রঙিন কিংবা ফটোগ্রাফের জন্য উপযুক্ত নয়। এছাড়া বেশির ভাগ ফ্যাক্স মেশিনে থার্মাল পেপার ব্যবহার করা হয় বলে ডকুমেন্টটি খুব তাড়াতাড়ি অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion